যশোরের মণিরামপুরে পাওনা ৫ হাজার টাকার জন্য মিন্টু হোসেন (৪২) নামে এক ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একই পরিবারের আরও চারজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার দুই আসামীকে পুলিশ আটক করেছে। শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিন্টু হোসেনের মৃত্যু হয়।
আর এ হামলার ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি চায়ের দোকানে ঘটে। নিহত মিন্টু হাকোবা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।
হামলার শিকার তার দুই ভাই সেন্টু ও পিকুল ও তাদের মা-বাবা চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে সেন্টুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ ও হামলার শিকার পিকুল হোসেন জানান, ঘটনার দিন হাকোবা এলাকার সাব্বির হোসেন নামে এক ব্যক্তি সেন্টুর চায়ের দোকানে এসে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় সাব্বির সেন্টুর চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে যায়। এ সময় সেন্টুর ভাই শিপলু ও তার পরিবার এগিয়ে এসে বাধা দিলে সাব্বির চলে যায়। পরে সাব্বির দলবল নিয়ে এসে তিন ভাইকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে।
এ ঘটনায় নিহত মিন্টুর মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে শুক্রবার মণিরামপুর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে হাকোবা গ্রামের বারিক সরদারের ছেলে ফারুক হোসেন (৪৫) ও বিল্লাল হোসেনের ছেলে ছোট সাব্বির নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ঘটনার মূল হোতা বড় সাব্বির পলাতক রয়েছেন।
নিহত মিন্টুর বাবা আব্দুল আজিজ জানান, দুই বছর আগে আমার মেজ ছেলে সেন্টুর ভ্যান চুরি হয়। তখন হাকোবা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন নতুন ভ্যান কেনার জন্য আমাদের পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা দেন। এরপর আজিম আর টাকা ফেরত চাননি। আজিম কাউন্সিলরের দেওয়া সেই টাকা এক মাস ধরে আমাদের কাছে দাবি করছে হাকোবা এলাকার বড় সাব্বির নামে এক ব্যক্তি। আমরা বলেছিলাম আজিমকে সঙ্গে আনলে টাকা দিয়ে দেব। কিন্তু সাব্বির কাউন্সিলর আজিমকে এক দিনও সঙ্গে আনতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার এক ছেলের চায়ের দোকানে এসে সাব্বির ফের টাকা চায়। টাকা না পেয়ে নানা হুমকি-ধমকি দিতে থাকে সাব্বির। এ সময় আমরা এগিয়ে এসে বাধা দিলে সাব্বির চলে যায়। পরে পাঁচ-ছয়জন দলবল সঙ্গে নিয়ে এসে সাব্বির আমার তিন ছেলে ও আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ওপর হামলা করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে সবাইকে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ আসার পর ওরা পালিয়ে যায়। এরপর আমাদের পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমার বড় ছেলে মিন্টুকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শুক্রবার মেজ ছেলেকে একই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বড় ছেলে মিন্টু হাসপাতালে মারা গেছে। মেজ ছেলে সেন্টুর অবস্থাও ভালো না। সেজ ছেলে পিকুলের মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
এদিকে, মিন্টুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌরমেয়র আলহাজ্ব অ্যাভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু শোকাহত পরিবারের প্রতি শান্তনা জানাতে তার বাড়িতে যান।
থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অরুপ কুমার ঘোষ জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও দুজনকে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নম্বর-৩০। আমরা সাব্বির ও ফারুক নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রধান আসামি বড় সাব্বিরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম